ছবির ইতিহাস, ইতিহাসের ছবি (২২ তম পর্ব)

|| পৌণ্ড্রক বাসুদেব ও বাঙালির বিস্মৃত সৈন্যবল ||

নিকষ কালো অন্ধকার। নিস্তব্ধ নগরীর কোলাহল। নগর প্রাকারে কেবল জেগে আছে শস্ত্রধারী প্রহরীরা। নগরীর বাইরে দূরে হঠাৎ আলোক বিন্দু জেগে উঠলো। একটি দুটি করে ধীরে ধীরে সহস্র আলোক বিন্দু। এগিয়ে আসছে নগরীর দিকে। সতর্ক হয়ে উঠলো প্রহরীরা। শত্রু নয় তো?

বেশি কাল অপেক্ষা করতে হলো না। উন্মত্ত সমুদ্রের ন্যায় গর্জন করতে করতে এগিয়ে এলো অন্ধকারের গায়ে মিশে থাকা সৈন্যদল। আঘাত করলো নগরীর প্রধান দ্বারে। ভেতর থেকে কুলুপ এঁটে অস্ত্র বাগিয়ে নগরের রক্ষকগণ। দ্রুত খবর চলে গেলো রাজ প্রাসাদে। ঘুমন্ত নগরী কলরব করে জেগে উঠছে। নগরী আক্রান্ত। শত্রুসেনা নগরীর দ্বারপ্রান্তে। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে অনেকে। এ প্রবল পরাক্রান্ত নগরী আক্রমণ করার দুঃসাহস কার! এ যে আর পাঁচটি নগরীর মতে নয়। সারা ভারতভূমির ভাগ্য বিধাতার সিংহাসন আসীন শ্রী কৃষ্ণের নিজের নগরী, বীর যাদবকূলের নগরী – দ্বারকা। 


প্রাচীন পুণ্ড্রনগরের প্রতিরক্ষা প্রাচীর  

কুরুযুদ্ধ তখনো হয় নি। তবে ভারতের রাজনীতির আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। পূর্ব ভারতের আকাশে উজ্জ্বলভাবে জ্বলতে থাকা গৌরব রবি ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে উত্তর ভারতীয়দের হাতে। মগধের জরাসন্ধ নিহত হয়েছেন। তারপরে নিহত হলেন প্রাগজ্যোতিষরাজ নরকাসুর। বাকী কেবল পুণ্ড্র। অনমনীয় পুণ্ড্রকে করায়ত্ত করা সহজ নয়। তখন সিংহাসনে আসীন পৌণ্ড্রক বাসুদেব। সারা ভারতের রাজন্যগণ যাঁকে সমীহ করে চলেন।

মিত্রবর নরকাসুরের মৃত্যুর সংবাদে রুদ্ররূপ ধারণ করলেন পৌণ্ড্রক বাসুদেব। চিরকালের শত্রু শ্রীকৃষ্ণকে আক্রমণ করে মিত্রহত্যার প্রতিশোধ নিতে হবে। আট হাজার রথ, দশ হাজার হস্তী ও সুবিশাল সৈন্য নিয়ে দ্বারকা অবরোধ করলেন। মিত্রভাবাপন্ন রাজন্যবর্গ ও নিষাদরাজ একলব্যকে নিয়ে পৌণ্ড্রক বাসুদেব স্বয়ং এ অভিযানের মূল নায়ক। সৈন্যরা প্রদীপ ও মশাল জ্বালিয়ে মধ্যরাতের অন্ধকার দূর করলো। সিংহনাদ করে রাতের অন্ধকার কাঁপিয়ে প্রবল শঙ্খধ্বনি বেজে উঠল। নগরবাসীর বুক কেঁপে উঠল সে শব্দে। প্রবল পরাক্রমশালী পুণ্ড্রসেনাদের আক্রমণে বিপর্যস্ত যাদবসেনারা। নগরে উপস্থিত বৃষ্ণিবীর সাত্যকি, উগ্রসেন, বলভদ্র, উদ্ধব প্রমুখ মহাবীরগণ এগিয়ে এলেন দ্বারকা রক্ষায়। কৃষ্ণ তখন বদরিকাশ্রমে। পৌণ্ড্রক বাসুদেবের পরাক্রমে এই মহাবীরগণ বিপন্ন। সাত্যকি মূর্ছা গিয়েছেন। বাকীরাও পৌণ্ড্রক বাসুদেবের শর ও গদার আঘাতে আহত। শেষরক্ষা বুঝি আর হল না!

দূত মারফত খবর গিয়েছে বদরিকাশ্রমে। বৃষ্ণিবীরগণ যখন পৌণ্ড্রক বাসুদেবের হাতে বিপর্যস্ত এবং তিনি নিজেও রণ-ক্লান্ত, তখন যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হলেন শ্রীকৃষ্ণ। ঘোরতর যুদ্ধ শুরু হলো আবারো। পৌণ্ড্রক বাসুদেবের বিক্রম দেখে আশ্চর্য হলেন কৃষ্ণ, বলে উঠলেন, "অহো বীর্যম্ অহো ধৈর্যমস্য পৌন্ড্রস্য দুঃসহম।" 

রণ-ক্লান্ত পৌণ্ড্রক বাসুদেব আর কত লড়বেন। অবশেষে নিহত হলেন কৃষ্ণের হাতে। তবু আদায় করে নিলেন কৃষ্ণের মুখ থেকে বীরের সম্মান। শ্রদ্ধেয় নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী বলেছেন, কৃষ্ণের আক্রমণটা হয়েছিল পেছন থেকে সাঁড়াশির মতো। যাইহোক, একটি বিরাট অধ্যায়ের যবনিকাপাত হলো সেদিন। সেই সাথে পুণ্ড্র ও বঙ্গের ভাগ্যাকাশের রবি অস্তমিত হলো কয়েকশ বছরের জন্য। 

পৌণ্ড্রক বাসুদেব পৌণ্ড্রবংশীয় রাজন্যগণের মধ্যে সবচেয়ে পরাক্রমশালী ছিলেন। ১৬০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে পুরুরাজ বলীর ক্ষেত্রজ পুত্র পুন্ড্র এই পুন্ড্ররাজ্য স্থাপন করেন। আর পৌন্ড্র বাসুদেবের রাজ্যলাভ ১২৮০ খ্রীষ্টপূর্ব বা তার কয়েক বছর পরে। এই সময়কাল নির্ণয় করা হয়েছে মগধরাজ জরাসন্ধের রাজত্বকাল অনুসারে। এই জরাসন্ধ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময়কালে সমগ্র ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী নৃপতি ছিলেন, যাকে স্বয়ং কৃষ্ণও অত্যন্ত সমীহ করে চলতেন। শ্রীযুক্ত রমেশচন্দ্র দত্ত মহাভারত ও হরিবংশের ভিত্তিতে জরাসন্ধের রাজত্বকাল নির্ধারণ করেন ১২৮০ – ৫৯ খ্রীষ্টপূর্ব। পৌন্ড্রক বাসুদেব জরাসন্ধের একজন প্রধান মিত্র ছিলেন।

মহাভারতপ্রমুখ গ্রন্থে পৌন্ড্রক বাসুদেবকে বর্ণনা করা হয়েছে মহাবলশালী হিসেবে "বঙ্গ-পুন্ড্র-কিরাতেষু রাজা বলসমন্বিতঃ।" মহাভারতের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনাবলীতে পৌণ্ড্রক বাসুদেব উপস্থিত স্বমহিমায়; পাঞ্চালীর স্বয়ম্ভর সভা, যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞ, এমনকি জরাসন্ধের যাদবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রায় তাঁর সরব উপস্থিতি গ্রন্থাকারগণ বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। হরিবংশ পৌণ্ড্রক বাসুদেবকে অভিহিত করেছেন "পৃথগক্ষৌহিণীপতি" হিসেবে, অর্থাৎ তাঁর নিজস্ব এক অক্ষৌহিণী সেনা ছিল। সেসময় সব রাজাদের এক অক্ষৌহিণী সেনা ছিল না, তাই এটি নিঃসন্দেহে বাঙালির পূর্বজদের গৌরবের বিষয়। এক অক্ষৌহিণী সেনা বলতে ২১৮৭০ টি হস্তী, ২১৮৭০ টি রথ, ৬৫৬১০ টি অশ্ব এবং ১০৯,৩৫০ টি পদাতিক সৈন্য বুঝায়। পুণ্ড্রের হস্তীবাহিনীর খ্যাতি ছিল সমগ্র ভারতবর্ষে। কুরুযুদ্ধে পৌণ্ড্রক বাসুদেবপুত্র পুত্র সুদেব এক বিশাল হস্তীবাহিনী নিয়ে কৌরবদের পক্ষে যোগ দেন এবং খুব বীরত্ব প্রদর্শন করেন। পুণ্ড্রের শক্তিশালী নৌসেনার পরিচয় মহাভারতে না থাকলেও এটি খুব যুক্তিযুক্ত। নদীবহূল বিশাল রাজ্যে নৌসেনা থাকবে সেটি স্বাভাবিক। জানা যায়, ৭ম খ্রিষ্টপূর্বাব্দে চীনদেশের রাজাকে জনৈক বঙ্গাধিপতি ২৮০০ জন নৌসেনা ও কিছু রণতরী দিয়ে সহায়তা করেছিলেন। প্রাচীন বাংলার গৌরবময় সামরিক শক্তির আরেকটি দৃষ্টান্ত এটি।

বাসুদেবের পিতার নাম বসুদেব। মা সুতনু ও নারাচী (মৎস্যপুরাণ মতে রথরাজী)। সুতনু পুত্র বাসুদেব এবং নারাচী পুত্র কপিল। কপিল যোগব্রত অবলম্বন করায় বসুদেবের উত্তরাধিকারী হিসেবে পুন্ড্রের রাজা হন। কৃষ্ণের সঙ্গে তাঁর বিরোধের অন্যতম কারণ "বাসুদেব" নামধারণ নিয়ে। খুব সম্ভবত বাসুদেব কথাটি বীরত্বের অথবা ক্ষমতার শ্রেষ্ঠত্বসূচক উপাধি। পুণ্ড্ররাজ্যের উত্থান পৌণ্ড্রক বাসুদেবের হাত ধরে এবং সমগ্র পুণ্ড্র, বঙ্গ ও কিরাতদেশ নিয়ে এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে। 

পুণ্ড্রের ইতিহাস তো বাঙালির পূর্বজদের গৌরবগাঁথা।  যে বাংলাকে বলা হতো ম্লেচ্ছদের দেশ, যে পুণ্ড্রের মাটিতে পা রাখলে প্রায়শ্চিত্ত করতে হতো, সে-ই পুণ্ড্রের উত্থানের কথা তো কেবল কল্পকাহিনি নয়। তা-ও আবার এ উত্থানের গল্পগুলো আমরা জানতে পারি সেই আর্যদের গ্রন্থাবলী থেকে। আজকের দিনে বসে আমরা প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননে পৌণ্ড্রক বাসুদেবের সময়কার কোন পাথুরে প্রমাণ আমরা পাবো না, পাওয়ার কথাও নয়। খ্রীষ্টপূর্ব ১২৮০ মতান্তরে ১৫০০ অব্দের নিদর্শন তো পাওয়া সহজ নয়। তবে আমরা অনেক ধর্মেতিহাস পাবো, যেগুলোর লেখক কিন্তু আর্যগণ। পুণ্ড্রের ও পৌণ্ড্রক বাসুদেবের কথা মহাভারত, হরিবংশ, ভাগবতপুরাণে আমরা যতটুকু পাই, সেটি বিজেতার কলমে লেখা। পুণ্ড্রের অনেক কথাই সেক্ষেত্রে ঢেকে দেয়া অর্থাৎ সেন্সরড করা হয়েছে। তারপরেও যতটুকু কথা জানা যাচ্ছে সেটিও কম নয়। হরিবংশে পৌণ্ড্রক বাসুদেবের দ্বারকা অবরোধের বর্ণনাটি দিনশেষে কিন্তু কৃষ্ণের শ্রেষ্ঠত্বজ্ঞাপক। কিন্তু ভালোভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পৌণ্ড্রক বাসুদেবের বীরত্বের এক অসামান্য পরিচয় নিহিত হয়ে আছে লেখকের বর্ণনার মধ্যেই। 

প্রাচীন পুণ্ড্রনগরের প্রতিরক্ষা প্রাচীর 


একটা বিষয় লক্ষণীয়, কৃষ্ণকে সরাসরি আক্রমণ করার সাহস সমসাময়িক আর কোন রাজা দেখান নি। মিত্রের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয়ার স্পৃহা থেকে এত বড় কাজে নেমে পড়াটা সাহসিকতার চুড়ান্ত প্রকাশ এবং মিত্রের প্রতি অসামান্য ভালোবাসার দৃষ্টান্তও বটে। বাঙালির জাতিসত্ত্বায় সেই আদিকালেই সাহসিকতার বীজটি রোপিত হয়েছিল বলা যায়। আত্মভোলা বাঙালি আজ সে গৌরব বিস্মৃত হয়ে গিয়েছে।

বাঙালির পূর্বজদের সাহসিকতার কথা বলতে গেলে আরেকটি দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় পৌণ্ড্রক বাসুদেবের প্রায় আড়াই হাজার বছর পর। মহারাজ শশাঙ্ক ততদিনে গত হয়েছেন। গৌড়ে তখন চরম অরাজকতা। কাশ্মীররাজ ললিতাদিত্য মুক্তাপীড়ের সঙ্গে গৌড়েশ্বরের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব। ললিতাদিত্য গৌড়রাজকে কাশ্মীরে আমন্ত্রণ জানালেন সব দ্বন্দ্ব নিরসন করে সন্ধি করার জন্য। গৌড়েশ্বর চিরশত্রুর রাজ্য কাশ্মীরে যেতে রাজী না হলে কাশ্মীররাজ তাঁর গৃহদেবতা "পরিহাস-কেশব" এর শপথ নিয়ে তাঁকে অভয় দিলেন এবং জানালেন যদি এ শপথের ব্যতয় হয় তবে পরিহাস-কেশব দায়ী থাকবেন। আশ্বস্ত গৌড়রাজ কাশ্মীর গেলে ললিতাদিত্য এ শপথ ভঙ্গ করে ত্রিগামী নামক স্থানে তাঁকে গুপ্তঘাতক দিয়ে হত্যা করেন। 

এহেন বিশ্বাসঘাতকতা ও নিজেদের রাজার মৃত্যুর খবর শুনে গৌড়সেনার একটি ছোট দল প্রতিশোধ নিতে তীর্থযাত্রীর ছদ্মবেশে কাশ্মীরে যায়। তারা সারদাদেবীর মন্দির দেখার ছলে পরিহাস-কেশবের মন্দিরে প্রবেশ করলো। যেহেতু তাদের প্রভুর মৃত্যুর জন্য পরিহাস-কেশব দায়ী, তাই তারা মন্দির আক্রমনের সিদ্ধান্ত নেয়। মন্দির পুরোহিতের সন্দেহ হওয়ায় তিনি মন্দিরের সদর দরজা বন্ধ করে দেন। ললিতাদিত্য তখন নিজ রাজ্যে ছিলেন না। গৌড়সেনারা পরিহাস-কেশব মনে করে ভুলবশত "রামস্বামী" নামক আরেকটি বিষ্ণুমন্দিরে ঢুকে বিগ্রহ ভেঙে ফেলে এবং চারিদিক তছনছ করে দেয়। কলহনের রাজতরঙ্গিণীতে পাই:

Wonderful was at that time the heroism of the Gauda [Prince's] servants, who courageously sacrificed their lives for the sake of their departed lord. (324)

As these dark-colored [men] were falling blood-covered to the ground under tbe strokes, they resembled fragments of stones, [falling] from an antimon-rock taking a bright colour from liquid red chalk. (329)

মারট্যাণ্ড সূর্য মন্দির, ললিতাদিত্য নির্মিত। Jonh Burke, 1868 (Source: Wikipedia) 


কাশ্মীরসেনারা তাদের প্রতিহত করতে এলে প্রবল বিক্রম নিয়ে গৌড়সেনার ছোট্ট দলটি [যাদের গায়ের রং কৃষ্ণবর্ণ] লড়াই করে জীবন দিয়ে তাদের প্রভুর প্রতি ভালোবাসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। ইতিহাসে এ এক অসামান্য দৃষ্টান্ত। কলহনের ভাষায় এরূপ বীরত্বের কাছে সকল মণিমাণিক্যের ঔজ্জ্বল্য নিস্প্রভ। 

বিশেষ লক্ষ্যণীয় যে, এখানেও সাক্ষ্যদাতা কাশ্মীরের রাজকবি কলহন, গৌড়ের কেউ নয়। অর্থাৎ এবারেও শত্রুপক্ষের কলমে লেখা হলো গৌড়ের বীরত্ব। আত্মভোলা বাঙালি প্রভুভক্তি ও সাহসিকতার এ দৃষ্টান্তও বিস্মৃত। 

যুগে যুগে এমন কত বীরত্বগাঁথা রচনা করেছে অনুজ্জ্বল গাত্রবর্ণ, নাতিদীর্ঘ দৈহিক গড়ন, অনুচ্চ নাক ও "পাখিদের মতো" ভাষায় কথা বলা বাঙালির নমস্য পূর্বজগণ। নিজেরা তো লিখে রাখিনি সেসব কথা। ভাগ্যিস বিজেতার দল লিখে গিয়েছিল, নইলে তো তা-ও জানতাম না।

ইতিহাসের আরেকটি ঘটনার সামান্য আলোকপাত এ প্রসঙ্গে অতি জরুরি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মলগ্নে এপার বাংলার মানুষ আশ্রয় নেয় ওপার বাংলায়। ভারতের আশ্রয়ে থাকা মানুষগুলো বিভিন্ন সামরিক ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ পায় ভারতের অসামান্য সহযোগিতায়। যুদ্ধের ফলাফল সবারই জানা। যখনই সেসময়কার প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের ভিডিও ফুটেজ দেখি, আশ্চর্য হয়ে যাই। যে মানুষগুলো বন্দুক ধরে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, সেই শ্যামবর্ণ নিরীহ চেহারার মানুষগুলোর মুখে চোখে কি এক দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। জীবনে কেনদিন যারা অস্ত্র ছুঁয়ে দেখেনি, তাঁরাই কিনা যুদ্ধে যাবে। এমন পাগলপারা সাহসিকতা তো বাঙালির রক্তের গভীরে প্রোথিত, আশ্চর্যের তো নয়। পৌণ্ড্রক বাসুদেব থেকে শুরু করে মহারাজাধিরাজ শশাঙ্ক, সেই গৌড় সেনাদল, বিশাল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা গোপাল-ধর্মপাল-দেবপাল হয়ে প্রশিক্ষণ নেয়া বাংলার কৃষক যুবকের দল, এঁরা তো একই সুতোয় গাঁথা, শেকড় তো এক জায়গায়। নানা বিভাজনে বিভক্ত বাঙালিকে খুঁজে পেতে হবে সেই হারানো সুতোখানি, যেতে হবে শেকড়ের কাছে। আত্মসমর্পণ করে বিলুপ্ত হওয়া তো বাঙালির ধাতে নেই।


তথ্যসূত্র:

১. হরিবংশ, ২৪ - ২৭ অধ্যায়

২. আদিপর্ব, মহাভারত

৩. বৃহৎ বঙ্গ, দীনেশচন্দ্র সেন

৪. মহাভারতের ভারতযুদ্ধ ও কৃষ্ণ, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

৫. পৌণ্ড্রবর্দ্ধন ও করতোয়া, শ্রীহরগোপাল দাসকুণ্ডু

৬. উত্তরবঙ্গের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, কমল চৌধুরী সম্পাদিত 

৭. রাজতরঙ্গিণী, কলহন

৮. বাঙালির বল বা বাঙালি জাতির সামরিক ইতিহাস, রায় সাহেব শ্রীরাজেন্দ্রলাল আচার্য্য

Comments

Popular posts from this blog

খোদার পাথর ভিটা, পুণ্ড্রনগর (মহাস্থানগড়)

গোবিন্দ ভিটা, মহাস্থানগড়

ছবির ইতিহাস, ইতিহাসের ছবি (৪র্থ পর্ব)