Posts

Showing posts from September, 2021

ছবির ইতিহাস, ইতিহাসের ছবি (২১ তম পর্ব)

Image
|| পাথর স্তম্ভের খুঁটিনাটি || বাংলার ইতিহাস চর্চায় পাথরের নিদর্শনসমূহ একটি বিরাট স্থান দখল করে আছে। ইতিহাসের অজানা কতশত অধ্যায় লেখা আছে পাথরের শিলালেখগুলিতে। বাদাল স্তম্ভের মতো এসব শিলালেখ আবিষ্কার ও পাঠোদ্ধার না হলে আজ আমাদের ইতিহাস আলেখ্য অনেকাংশে অজানা থেকে যেত। আবার বাংলার অসংখ্য বিহার, মন্দির ও নগরীর ধ্বংসাবশেষে আমরা বিপুল সংখ্যক পাথরের স্তম্ভ দেখতে পাই। এসব পাথরের স্তম্ভের গায়ে খোদিত ইতিকথা না পাওয়া গেলেও ইতিহাসের নীরব সাক্ষ্য এসব পাথরখন্ড।  জগদ্দল মহাবিহারের পাথরস্তম্ভ প্রাচীন পুণ্ড্রনগর (মহাস্থানগড়), সোমপুর মহাবিহার, জগদ্দল মহাবিহার, মাহী সন্তোষ, পাথরঘাটা প্রভৃতি প্রত্নস্থান দেখতে গিয়ে ইতিউতি ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য পাথরের স্তম্ভগুলে দেখে অবাক হয়েছি। বিশেষ করে, জগদ্দল মহাবিহারে যত পাথর দেখেছি, আর কোন বিহারে এতটা দেখিনি। এর তুলনা কেবল মাহী সন্তোষ ও পাথরঘাটা হতে পারে।  বাংলায় একটা বাগধারা প্রচলিত আছে "জগদ্দল পাথর", যার অর্থ গুরুভার। এ বাগধারার দুটি উৎস হতে পারে: ১. জগদ্দল মহাবিহার নির্মাণে বিপুল সংখ্যক পাথরের ব্যবহার একটি উপমায় দাঁড়িয়ে গেছে এবং ২. জগদ্দল মহাবিহার নির্মাণের ফল

ছবির ইতিহাস, ইতিহাসের ছবি (২২ তম পর্ব)

Image
|| পৌণ্ড্রক বাসুদেব ও বাঙালির বিস্মৃত সৈন্যবল || নিকষ কালো অন্ধকার। নিস্তব্ধ নগরীর কোলাহল। নগর প্রাকারে কেবল জেগে আছে শস্ত্রধারী প্রহরীরা। নগরীর বাইরে দূরে হঠাৎ আলোক বিন্দু জেগে উঠলো। একটি দুটি করে ধীরে ধীরে সহস্র আলোক বিন্দু। এগিয়ে আসছে নগরীর দিকে। সতর্ক হয়ে উঠলো প্রহরীরা। শত্রু নয় তো? বেশি কাল অপেক্ষা করতে হলো না। উন্মত্ত সমুদ্রের ন্যায় গর্জন করতে করতে এগিয়ে এলো অন্ধকারের গায়ে মিশে থাকা সৈন্যদল। আঘাত করলো নগরীর প্রধান দ্বারে। ভেতর থেকে কুলুপ এঁটে অস্ত্র বাগিয়ে নগরের রক্ষকগণ। দ্রুত খবর চলে গেলো রাজ প্রাসাদে। ঘুমন্ত নগরী কলরব করে জেগে উঠছে। নগরী আক্রান্ত। শত্রুসেনা নগরীর দ্বারপ্রান্তে। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে অনেকে। এ প্রবল পরাক্রান্ত নগরী আক্রমণ করার দুঃসাহস কার! এ যে আর পাঁচটি নগরীর মতে নয়। সারা ভারতভূমির ভাগ্য বিধাতার সিংহাসন আসীন শ্রী কৃষ্ণের নিজের নগরী, বীর যাদবকূলের নগরী – দ্বারকা।  প্রাচীন পুণ্ড্রনগরের প্রতিরক্ষা প্রাচীর   কুরুযুদ্ধ তখনো হয় নি। তবে ভারতের রাজনীতির আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। পূর্ব ভারতের আকাশে উজ্জ্বলভাবে জ্বলতে থাকা গৌরব রবি ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে উত্তর ভারতীয়দের হাতে।

ছবির ইতিহাস, ইতিহাসের ছবি (২০ তম পর্ব)

Image
|| বালিয়াটি জমিদার বাড়ির কথা || ১৭৭২ সালের ৩রা নভেম্বর। লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস লন্ডনে বোর্ড অব ডাইরেক্টরদের চিঠি লিখে রিপোর্ট  জানাচ্ছেন বাংলায় রাজস্ব আদায় ও অন্য বিষয়ের হাল-হকিকত। ইতিহাসে এ রিপোর্টের কথাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর দু'বছর আগে ১৭৭০ সালে ঘটে গিয়েছে বাংলার ট্র্যাজিক একটি অধ্যায় – ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। বাংলার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মারা গিয়েছিল এ করুণ দুর্ভিক্ষে।  ইতিতাসের অনেক পালাবদলের সূচনা হল এ সময়ে। বালিয়াটি জমিদার বাড়ির কথা বলার আগে হেস্টিংসের রিপোর্টের খুব সামান্য কয়েকটি তথ্যে আলোকপাত করতে চাই আজকে। হেস্টিংসের পাঠানো রিপোর্ট অনুযায়ী ১৭৬৮ থেকে ১৭৭২ সাল পর্যন্ত বাংলায় আদায়কৃত মোট রাজস্বের একটি ছোট্ট হিসেব: ক. ১৭৬৮ – ৬৯ সাল: ১৫২,৫৪,৭৫৬ টাকা খ. ১৭৬৯ – ৭০ সাল: ১৩১,৪৯,১৪৮ টাকা গ. ১৭৭০ – ৭১ সাল: ১৪,০০৬,০৩০ টাকা [দুর্ভিক্ষ] ঘ. ১৭৭১ – ৭২ সাল: ১৫৭,২৬,৫৭৬ টাকা সুচতুর হেস্টিংস সাহেব জানতেন বোর্ডের মনোভাব। তাই এতবড় দুর্ভিক্ষের সময়ও রাজস্ব একই হারে আদায়ের বিষয়ে বিশদে লিখলেন। জানালেন, রাজকর্মচারী, বিশেষত কালেক্টরদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে এবং খাজনা আদায়ের বিষয়ে একচুল ছাড় না

ছবির ইতিহাস, ইতিহাসের ছবি (১৯ তম পর্ব)

Image
|| পাকুটিয়া জমিদার বাড়িতে একদিন || পাঁচ বছর আগের কথা। ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে খাঁচাছাড়া পাখির মতো উড়ে চলেছি বাড়ির দিকে – আপন শহরে। যারা উত্তরবঙ্গে নিয়মিত যাতায়াত করেন, প্রায় সবারই হানিফ পরিবহনের বাসে চড়ার অনুভূতি নিশ্চয় আছে। দূরপাল্লার বাসটির লোগোর নীচে লেখা স্লোগানটি হলো "সড়কপথে বিমানের ছোঁয়া"। মানে বুঝতেই পারছেন, এ বাসে চড়লে সারা রাস্তা ইষ্টনাম করতে হয়, এত দ্রুত ও বেপরোয়া এরা। পারতপক্ষে এ বাসটিতে যাই না। সেবার বিধি বাম, ঈদ বলে কথা। অন্য বাসে সুযোগ না পেয়ে উঠে পড়লাম সব দোয়া-দরুদ পড়ে আর কি! রাস্তায় ঈদের ছুটির সময়কার তীব্র যানজট।  ঢাকা ছাড়ার পথে জ্যাম ঠেলতে ঠেলতে আমাদের বাসটি হুস করে শর্টকাট নিয়ে ঢুকে পড়লো অন্য রাস্তায়, সাইনবোর্ড পড়ে বুঝলাম মানিকগঞ্জ - টাঙ্গাইল বাইপাস সড়ক। সচরাচর এসব রাস্তায় বড় গাড়ি চলে না, ঈদের সময় বলে অনেক গাড়ি চোখে পড়লো, এদিকপানেও জ্যাম, সব গাড়ির ঢিমে গতি। অনেকটা সময় চলার পথে হঠাৎই চোখ আটকে গেল মাঠ পেরিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাসাদোপম একটি বাড়ির দিকে। গাড়ি থেকে সবটা দেখা গেল না, কিন্তু মনটা সেখানে আটকে রইলো। পরে ইন্টারনেটের বদৌলতে জানলাম বাড়িটি পাকুটি