Posts

Showing posts from August, 2021

ছবির ইতিহাস, ইতিহাসের ছবি (১৮ তম পর্ব)

Image
|| করতোয়ার লুপ্ত বাণিজ্য গৌরব || করতোয়াং সমাসাদ্য ত্রিরাত্রোপোষিতো নরঃ। অশ্বমেধমবাপ্নোতি প্রজাপতিকৃতা বিধিঃ।। পুণ্ড্রনগরের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা একসময়ের প্রমত্তা ও বিপুলকায়া করতোয়া নদী আজ শীর্ণকায়া। করতোয়ার পূণ্যকথা ও তীর্থ মাহাত্ম্য নিয়ে মহাভারত ও পুরাণাদিতে অনেক কথা বলা হয়েছে, যা আমরা কমবেশি শুনেছি ও পড়েছি।  তবে ধর্মেতিহাস ছাড়াও করতোয়ার আছে গৌরবময় বাণিজ্যের ইতিহাস। এ নদীর বুক দিয়ে যাতায়াত করতো বিশাল বাণিজ্য তরী; ফলে পুণ্ড্রের অর্থনীতি থাকতো সচল, কোষাগার ভরে উঠতো অর্থে। গ্রীকদের কাছেও এ নদী ছিল সুপরিচিত, যার প্রমাণ মেলে "দি পেরিপ্লাস অব দি ইরিথ্রিয়ান সি" বইতে।  করতোয়া তীরের সে সময়ের বাণিজ্য বন্দরগুলোর নাম এখনো রয়ে গেছে। গতিপথ বদলে করতোয়া চলে গিয়েছে দূরে, বন্দরের নামটা ঠিকই রয়েছে। আধুনিক বগুড়ায় চণ্ডীহারা বন্দর, মোকামতলা, নাগর বন্দর এখনো স্থলবন্দর হিসেবে বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যে অবদান রেখেই চলেছে। এমনকি পুণ্ড্রনগরের সুরক্ষা প্রাচীরের কাছেই অবস্থিত "জাহাজঘাটা" প্রত্নস্থল গৌরবময় সেই বাণিজ্যের সাক্ষ্যবাহী।  আজকের লেখাটি করতোয়ার বাণিজ্য গৌরবের সংক্ষিপ্ত কথা, বলতে পারেন App

ছবির ইতিহাস, ইতিহাসের ছবি (১৭ তম পর্ব)

Image
|| একটি দেউল ও মূক ইতিহাস || কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "ছুটি" গল্পটি পড়েন নি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আমাদের স্কুলে পাঠ্যবইয়ে ছিল গল্পটি। যখনই পড়েছি, মনটা ব্যথিত হয়েছে; বিশেষত যে সময়ে গল্পটি পড়তাম, তখন নিজেও ফটিকের বয়সী, মানে নিজেও একটা বালাই। মামা বাড়িতে অনাহূত ফটিকের শেষ কথাদুটি আসলে মর্মবেদনার মূল কারণ – "মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।" এ কথার সুর এখনো মর্মে বাজে। গম্ভীর পাঠকগণ ইতোমধ্যে বিরক্ত হয়ে গিয়েছেন ইতিহাসের লেখায় 'ছুটি' গল্পের অবতারণা করার জন্য। কারণটি পরিষ্কার বুঝে যাবেন লেখাটির শেষভাগে। গত ৮/১০ দিন আগে নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলায় "যোগীর ঘোপা" নামক একটি প্রত্নস্থল দেখে বাড়ি ফিরছি। সবে ৩/৪ কিলোমিটার পথ এগিয়েছি, সহসা গাছগাছালির ভীড়ে মাথা উঁচিয়ে থাকা একটি শিখর চোখে পড়ল। অমনি নেমে পড়া। রাস্তার পাশে দোকানের সাইনবোর্ডে জায়গার নাম লেখা "বকুলতলার মোড়"; জায়গাটি ১০ নং আমইড় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত, উপজেলা পত্নীতলা, জেলা নওগাঁ।  কয়েকজন বয়োবৃদ্ধ একটি মুদি দোকানের মাচায় খোশগল্পে মেতে আছেন। তাঁদের জিজ্ঞেস করতে বললেন, এ

ছবির ইতিহাস, ইতিহাসের ছবি (১৬ তম পর্ব)

Image
|| একটি নদীর কথা: ছোট যমুনা নদী || কিছুদিন আগে সমরেশ বসুর "গঙ্গা" এবং হরিশংকর জলদাসের "জলপুত্র" উপন্যাসদুটি পড়তে গিয়ে একটি বিষয় খেয়াল করলাম, বাংলাকে নদীমাতৃক দেশ বলা হলেও বাংলা সাহিত্যে নদী নিয়ে লেখা উপন্যাসের সংখ্যা খুবই কম, হাতে গোনা যায়। কবিতা ও গান অবশ্য আছে, তবে সুলুকসন্ধান করলে দেখবেন এ সংখ্যাটিও আশানুরূপ নয়।  বাংলার ইতিহাসচর্চায়ও এর প্রতিফলন সুস্পষ্ট। এদেশের ইতিহাস বর্ণনায় নদীর নামগুলো প্রায়শ রয়েছে স্থান নির্ণয়ের প্রয়োজনে, এর বেশি নয়। আবার গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, করতোয়া নদী নিয়ে যেটুকু আলোচনা আজ পর্যন্ত দেখা যায় সেখানে পৌরাণিক উপাখ্যান বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। অথচ বাংলার ইতিহাসে নদনদীর অবদান গবেষণার যথেষ্ট দাবী রাখে। কতশত ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে বাংলার বুকে শিরা-উপশিরার মতো বয়ে চলা জানা-অজানা কতশত নদনদী। আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির উৎকর্ষতায় নদীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ প্রসঙ্গে নীহাররঞ্জন রায়ের নিচের কথাগুলোর সাথে আমি একমত: "বাঙলার ইতিহাস রচনা করিয়াছে বাঙলার ছোট-বড় অসংখ্য নদনদী। এই নদনদীগুলিই বাঙলার প্রাণ; ইহারাই বাঙলাকে গড়িয়াছে, বাঙলার আকৃতি-প্রকৃতি ন

ছবির ইতিহাস, ইতিহাসের ছবি (১৫ তম পর্ব)

Image
|| একটি নদীর কথা: তুলসীগঙ্গা নদী || কবিগুরুর ছোট নদীর মতো বরেন্দ্রভূমিতে আমার নিজের জেলাতেও একটি ছোট, কিন্তু মিষ্টি নদী আছে।নাম তুলসীগঙ্গা নদী, বেশ রূপসী। কতবার দেখেছি, অথচ এর রূপসজ্জা প্রতিবার বদলে যায়। দু'দিন আগে শ্রাবণ মেঘের ঘনঘটায় দেখলাম আরেকটি মনোহারিণী রূপ। তিলোত্তমা অপ্সরাকে দেখিনি, তবে তুলসীগঙ্গার রূপের পসরা দেখেছি।  এখন দেখতে শান্তশিষ্ট ছোট নদী মনে হলেও একসময় এ নদীতে চলতো বড় বড় নৌকা, বাণিজ্যিক তরী। সমৃদ্ধ পুণ্ড্রনগর থেকে করতোয়া নদী হয়ে এসব বিশাল নৌকা চলে আসত তুলসীগঙ্গা নদীর তীরে পুণ্ড্রের প্রধান দুটি প্রশাসনিক কেন্দ্রের একটি – পঞ্চনগরীতে। সে পঞ্চনগরীর ধ্বংসাবশেষ এখনো রয়েছে জয়পুরহাটের পাথরঘাটায় । বিদেশী বণিকেরাও যাতায়াত করতো এ নদীপথে। কারণ, গ্রীকদের বর্ণিত পেন্টাপোলিস তথা পঞ্চনগরী তো এ নদীর তীরে। এসব গৌরবগাঁথা সবই আড়াই/ তিন হাজার বছর আগে রচিত হয়েছিল। পুণ্ড্রের স্বর্ণযুগে সেদিনের এ নগরীর সমৃদ্ধিও ছিল সর্বোচ্চ শিখরে। গুপ্তযুগে এ বিপুলা নদীর ওপর নির্মিত হয় বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত পাওয়া একমাত্র পাথরের সেতু। কি গরবিনী ছিল তুলসীগঙ্গা সে সময় বুকে সুদৃশ্য পাথরের সেতু নিয়ে। আজো এসব স্