সত্যপীর বা সত্যনারায়নের সুলুকসন্ধানে (৪র্থ পর্ব: সত্যপীরের কথা)



শোন দ্বিজ, আমি হয় সত্যনারায়ণ।
যেবা পূজে মোরে ঘুচে অর্থ অনটন।।
কলির পাতকী তরে পাতকী তারণ।
এক আত্মা বিশ্বময় সত্যনারায়ণ।।
প্রকাশে পাপিষ্ঠ নরে করিতে উদ্ধার। 
আসিলাম তব স্থানে কহিলাম সার।।


সত্যপীর বা সত্যনারায়ণ। বাংলার লোকায়ত বিশ্বাসে যিনি মিশে আছেন আবহমানকাল থেকে। হিন্দুদের দেবতা তিনি, মুসলমানদের পীর। নানা অনৈক্যের মাঝে ঐকতান তিনি। বাঙালি জাতি ধর্মের ভিত্তিতে আজকে বহু বিভক্ত। সে বিভক্তির মাঝে মিলনের সুর সত্যপীর।


বাংলার লোকসমাজে অনেক পীর ও লৌকিক দেবদেবী বিদ্যমান। হিন্দু ধর্মে যেমন লৌকিক দেবতা দক্ষিণরায়, বনদুর্গা, পাঁচ কুমার, বাসলী, পাঁচু ঠাকুর, ওলাই চন্ডী, শীতলা, ঢেলাই চন্ডী প্রভৃতি এখনো স্বমহিমায় পূজিত হচ্ছেন, তেমনি মুসলমান সমাজে সত্যপীর, কালু-গাজী, মাদার পীর, পাঁচ পীর, মানিক পীর, পীর গোরাচাঁদ, বুড়াপীর প্রভৃতি পীরগণ শিরনী ও শ্রদ্ধা পেয়ে আসছেন। এ সমস্ত পীরগণের কেউ কেউ ঐতিহাসিক চরিত্র হিসেবে স্বীকৃত, আবার অনেকের ঐতিহাসিক অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। আমরা তৃতীয় পর্বে পীরবাদ কিভাবে ভারতে এলো সে সম্পর্কে কিঞ্চিত আলোকপাত করেছি। 
আরব, পারস্য, তুর্কিস্তান, আফগানিস্তান থেকে সুফিগণ সারা ভারতে আস্তানা গড়ে তুলে ধর্মপ্রচার করতে থাকেন। এই ঢেউ বাংলায়ও এসে পড়লো। এই সুফিগণ দেহত্যাগ করলে তাঁদের কবরস্থানে মাজার প্রতিষ্ঠিত হয়। এসব মাজারে অনুসারী ভক্তগণ ও নানা মনস্কামনা নিয়ে সাধারণ মানুষ আসতে থাকে। সেসময় থেকে এঁনারা সুফি অথবা পীর হিসেবে লাখো মানুষের শ্রদ্ধা ও শিরনি পেয়ে আসছেন আজ পর্যন্ত। উদাহরণ স্বরূপ আমরা খাজা মইনুদ্দীন চিশতি (রঃ), খাজা নিজামউদ্দীন আউলিয়া (রঃ), হযরত শাহ জালাল (রঃ), হযরত বায়োজিদ বোস্তামী (রঃ) এর নাম বলতে পারি। অনেক সুফিসাধক ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি মুসলমানদের রাজ্য বিস্তারে সহযোগিতা করেছিলেন এবং এঁদের অনেকে যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। যেমন বাবা আদম (রঃ), শাহ সুলতান বলখী (রঃ), পীর গোরাচাঁদ ও অনেকে। আবার অনেক মুসলিম যোদ্ধা (এঁরা যোদ্ধা হিসেবেই এসেছিলেন, সুফী হিসেবে নয়) যুদ্ধে শহীদ হয়ে পরবর্তীতে পীর অথবা গাজী হিসেবে আখ্যা পেয়েছেন; যেমন বুড়াপীর হিসেবে খ্যাত ইখতিয়ার উদ্দিন বিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজি। এ সকল ঐতিহাসিক চরিত্র ছাড়াও আরেক ধরণের পীর রয়েছেন, যাঁদের ঐতিহাসিক পরিচয় সুনিশ্চিতভাবে জানা যায় না, যেমন সত্যপীর, মানিক পীর, পাঁচপীর, বনবিবি প্রমুখ। ভারতে এসে লোকায়ত বিশ্বাসের সাথে মূল ইসলামের সংমিশ্রণের ফলে ইসলাম ধর্মে নানা ধরণের নতুন বিশ্বাস ও প্রথা উদ্ভুত হয়, যা "লৌকিক ইসলাম" নামে পরিচিত। এ সমস্ত বিশ্বাস ও প্রথা মূল ইসলামের, বিশেষত শরিয়তের পরিপন্থী বা সাংঘর্ষিক। মূলত লৌকিক ইসলাম থেকেই এই শেষোক্ত শ্রেণীর পীরগণের উদ্ভব ও প্রচার। এ সকল পীরদের সম্পর্কে আমরা প্রাচীন পুঁথি, পাঁচালী, লোকগান, লোকগাথা প্রভৃতি লোকসাহিত্য থেকে জানতে পারি।


উপরোক্ত পীরগণ প্রথম দিকে মুসলমানদের নিকট থেকে শ্রদ্ধা ও শিরনি পেলেও কালক্রমে হিন্দুদের নিকট হতেও শিরনি পেতে লাগলো। শুরুর দিকে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এবং ক্রমশ অভিজাত সমাজ পর্যন্ত এসব পীরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ভক্তি করতে লাগলো। মূলত পীরদের নানা বুজরুকি বা অলৌকিক ক্ষমতা ও সেসব নিয়ে প্রচলিত গল্পকথা এই আকর্ষণ তৈরীর মূখ্য কারণ। এভাবে পীরের মাজার ও আস্তানাগুলো হিন্দু ও মুসলমানদের মেল বন্ধনের একটি স্থান হয়ে দাঁড়ালো। আজ আমরা সাম্প্রদায়িকতার বাণে জর্জরিত হলেও একসময় এইসব পীরের শিরনি দেওয়া, ওরস উদযাপন, পালাগান আয়োজন প্রভৃতি সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি সম্প্রীতির সমাজ গড়ে উঠেছিল। এখনো দুই বাংলায় অবস্থিত মাজারগুলোতে উভয় ধর্মের মানুষের যাতায়াত অবাধ। উরশ ও মেলা উপলক্ষে সব ধর্মের মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে অংশ নেয়। বাংলাদেশের অনেক মাজারে হিন্দুভক্তদের কথা বিবেচনায় শিরনিতে গোমাংস নিষিদ্ধ; যাতে জাতপাতের বিচার না করে সবাই শিরনি খেতে ও মাজারে আসতে পারে। এছাড়া হিন্দুভক্তদের নবজাতক শিশুর মাথার চুল মাজারে দেয়া, নানা মনোবাসনা পূরণের জন্য মানত করা ও সে অনুযায়ী পরবর্তীতে শিরনি দেওয়া, অসুখ হলে মাজার থেকে পানি-পড়া ও তাবিজ/মাদুলি নেওয়া প্রভৃতি আচার ও বিশ্বাস এখনো সমাজে অন্তঃসলিলা হয়ে বহমান। সবার অলক্ষ্যে একদিন এভাবেই জনমানসে পরমতসহিষ্ণুতার বীজ রোপিত হয়েছিল। আজকে কিছু স্বার্থপর গোষ্ঠীর কারণে আমরা সে সম্প্রীতি খোয়াতে বসেছি। 


মধ্যযুগে পীরদের নিয়ে প্রচুর গান, পাঁচালী, পালাগান প্রভৃতি রচিত হয়েছে হিন্দু ও মুসলমান লেখকদের দ্বারা। রচনার সংখ্যা এতটাই যে, বাংলা সাহিত্যে "পীর সাহিত্য" নামে একটা আলাদা ধারা তৈরী হয়। আমরা শুরুতে সত্যপীর কে সেটি নিয়ে কথা বলবো। এরপরেই আসবে সত্যপীরের পাঁচালী নিয়ে নানা কথা। পর্যায়ক্রমে আমরা সত্যপীরের উৎস সন্ধান এবং ঐতিহাসিক ভিত্তি যাচাই করার প্রয়াস করবো।
বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় পীর হিসেবে সবার আগে আসে সত্যপীরের নাম। যিনি সত্যনারায়ণ, তিনিই সত্যপীর। সত্যের পক্ষে সত্যপীর, ধর্মের ভিন্নতা তাঁর কাছে নেই, না আছে কোন জাতি ভেদ। তাই তিনি যেমন মুসলমানদের শিরণি নেন, ব্রাহ্মণের পূজাও নেন, মুচির হাত দিয়ে মাখানো শিরণিও খান।

দেখিয়া সকল দ্রব্য হৈল আনন্দিত।।
পির বলে সব দ্রব্য করহ মক্ষিত*
হীরা বলে মোর হাতে কেহ নাহি খায়।।
তুমি যে খাইতে চাহ শুনি লাগে ভয়*
অধম মুচার কুলে জনম আমার।। 


লৌকিক দেবতা হিসেবে সত্যপীর বাংলার হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের শ্বাশত প্রতীক। মধ্যযুগে সত্যপীর নিয়ে হিন্দু ও মুসলমান কবিগণ প্রচুর পাঁচালী রচনা করেছেন। গবেষক গিরীন্দ্রনাথ দাস মহাশয় সত্যপীর নিয়ে লেখা অসংখ্য পুঁথিগুলোর রচয়িতাদের সন্ধান করেছেন। তিনি মোট ১১৯ জন কবির কথা জানিয়েছেন। তিনি সুকুমার সেনের "বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস (১ম খন্ড)" থেকে পেয়েছেন ৬০ জন, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের "বাঙ্গালা প্রাচীন পুঁথির বিবরণ" গ্রন্থ থেকে পেয়েছেন ৫ জন, পঞ্চানন মন্ডলের "পুঁথি-পরিচয়" থেকে ১৪ জন, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের "গ্রন্থতালিকা" থেকে ২৪ জন, এবং অন্যান্য উৎস থেকে ১৬ জনের নাম পেয়েছেন। এই ১১৯ জন কবির প্রত্যেকেই একাধিক পালা রচনা করেছেন। সে হিসেবে কেবল সত্যপীর নিয়েই কয়েকশত পালা রয়েছে। এই ১১৯ জন ছাড়াও আরো অনেক কবির কথা হারিয়ে গিয়েছে কালের স্রোতে। সংখ্যার দিক দিয়ে এরপরেই আছে মনসামঙ্গল কাব্য, যার কবির সংখ্যা ৫০ - ৬২ জনের মতো। অর্থাৎ মধ্যযুগে পালা ও পুঁথির হিসেবে সত্যপীর সবার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিল এ কথা বললে ভুল হবে না। 


প্রতিটি পাঁচালী গ্রন্থে সত্যপীরকে বলা হয়েছে বিষ্ণুর অবতার, যিনি কলিযুগে এসেছেন পতিতপাবন হিসেবে এবং ধর্ম নিয়ে ভেদ দূর করতে। দু'একটি পুঁথিতে, বিশেষত রামেশ্বর ভট্টাচার্য বিরচিত পুঁথিতে আমরা দেখি, যবনের অত্যাচার থেকে হিন্দুধর্ম তথা সৃষ্টিকে রক্ষা করতে নারায়ণ সত্যপীর হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন। 

ছয় দরশনে কয়, এক ব্রহ্মা দুই নয়, 
অন্য অন্য ভিন্ন ভিন্ন নাম।
কলিতে যবন দুষ্ট, হিন্দুকে করিল নষ্ট, 
দেখিয়া রহিম হৈল রাম।।


ভেদাভেদ দূরকারী বলেই সত্যপীর অন্যান্য পীরদের মতো ধর্ম প্রচারক নন। ঐতিহাসিক পীরগণের প্রধান কাজই ছিল ইসলামের প্রচার ও প্রসার। লৌকিক ইসলামে উদ্ভুত অধিকাংশ পীরগণও নিজের অলৌকিক ক্ষমতা জাহির করে মানুষকে ইসলামে দীক্ষিত করার বর্ণনা পুঁথিগুলোতে রয়েছে। সে দিক থেকে সত্যপীর সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। ইনি নিজের মহিমা জাহির করে হিন্দুদের ধর্মান্তর করেন নি; গাজী-কালু প্রমুখ অন্য পীরগণ যেমনটি করেছেন। গাজী-কালু হিন্দু অত্যাচারী ডিমক রাজাকে ধর্মান্তরিত করেছেন বলে দেখতে পাই পুঁথিতে: 

বাড়ির আগে দিল এক গাযীর মসজিদ।
গরু খাসি দিয়া শিরনী করিল ত্বরিত।।
ডিমক সহরে হৈল গাজীর যাহির।
পাপ মূর্তি ছাড়ি রাজা নেকি পথে স্থির।।


অন্যদিকে সত্যপীর অত্যাচারী রাজা মৈদানব বা ময়দানবকে পরাস্ত করে শিরণী আদায় করে ছেড়ে দিয়েছেন, কাউকে ধর্মান্তরিত করেন নি। কেবল মৈদানবের ক্ষেত্রে নয়, সত্যপীরের যতগুলো পালা ও পুঁথি পাওয়া যায়, সবগুলোর ক্ষেত্রে এ কথাটি খাটে। সত্যপীরের পুঁথিগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, প্রথমদিকে মুসলমানদের পাশাপাশি কেবলমাত্র নিম্নবর্ণের হিন্দুরা সত্যপীরের পূজা করতো। 

রচিল কালাম বাণী শিষ্য সঙ্গে করি।
শিরে রাজ সত্যপীর কণ্ঠে বাগেশ্বরী।।
হরনারায়ণ দাসে লেখে রচে কৃষ্ণহরি।
মুসলমানে বলে আল্লা শূদ্রেতে বলি হরি।।


এখানে মুসলমানদের বিপরীতে "হিন্দু" না বলে "শূদ্র" বলা হচ্ছে। অর্থাৎ এ সময় সত্যপীরের গ্রহনযোগ্যতা নিম্নবর্ণের মানুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল বলেই প্রতীয়মান হয়। এ কথার পেছনে বেশি করে সমর্থন যোগায় হীরামুচির পালা, কাঠুরিয়ার পালা, মঙ্গলু বাদ্যকরের পালা, ধনঞ্জয় গোয়ালার পালা ও শশী বেশ্যার পালা। নানা শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে লেখা এসব পালা সত্যপীরের প্রচারের ব্যাপ্তি বুঝতে সাহায্য করে। সমাজের একটি বিরাট অংশ এ নতুন লৌকিক দেবতা/পীরকে গ্রহন করেছিল এভাবেই। 


সমাজের প্রান্তিক ও অবহেলিত মানুষকে কৃপাধন্য করেছেন সত্যপীর। কেবল তাই নয়, পুঁথিগুলোতে সত্যপীরের বয়ানে জাত-পাতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে। 


ঘোলা মৈলা রাঙা কাল বর্ণ হৈয়া।।
একি সমুদ্রে সবে যাবে মিলাইয়া*
এমতি ছত্রিশ জাত এক জাত হইয়া।।
এক পথ দিয়া সবে যাবে মিশাইয়া*


হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে মেলবন্ধনের প্রয়াসও সুস্পষ্ট। কৃষ্ণহরি দাসের সন্ধ্যাবতীর পালাটিতে আমরা দেখতে পাই, রাজা মৈদানবের রাজপুরোহিত কুশল ঠাকুরের ঘরে বালকরূপী সত্যপীর নদীতীরে একটি কোরআন শরীফ কুড়িয়ে পেয়ে ঘরে নিয়ে আসেন। কুশল ঠাকুর কোরআন পড়লে জাত নষ্ট হওয়ার ভয় দেখিয়ে সেটি পুনরায় নদীতে ভাসিয়ে দিতে বলেন। সত্যপীর তখন ঘোষণা করেন:

এক ব্রহ্ম বিনে আর দুই ব্রহ্ম নাই।
সকলের কর্তা এক নিরঞ্জন গোসাই।।
সেই নিরঞ্জনের নাম বিছমিল্লা কয়।
বিষ্ণু আর বিছমিল্লা কিছু ভিন্ন নয়।।
কহ কোন নদী বইয়া কোন দিকে যায়।
সমুদ্রে যাইয়া সব একত্র মিশায়।।


একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থায় নতুন ধর্মবিশ্বাসের অনুপ্রবেশ ঘটলেও সাধারণ মানুষকে পরস্পর থেকে একেবারে দূরে নিয়ে যেতে পারে নি। শাসকশ্রেণী অন্য ধর্মমতের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করলেও হিন্দু ও বৌদ্ধ থেকে ধর্মান্তরিত মুসলমানরা সবাই এ বিদ্বেষভাব গ্রহন করতে পারে নি। আজন্ম যাদের সাথে বসবাস করে এসেছে, সেসব মানুষের প্রতি সহসা ধর্মের ভিত্তিতে শত্রুভাব পোষণ করা সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে সহজ ছিল না। আর তাই এমন ঐক্যমত স্থাপনের প্রয়াস। ঠিক এ কারণেই হিন্দু পাঁচালীকারগণ নির্দ্বিধায় পুঁথিতে আরবী-ফারসী শব্দ ব্যবহার করেছেন এবং সত্যনারায়ণকে সত্যপীর বলে জয়ধ্বনি দিয়েছেন। অন্যদিকে মুসলিম কবিগণ সত্যপীরের পরিবর্তে সত্যনারায়ণ কথাটির প্রয়োগ করেছেন সাবলীলভাবে। সত্যপীরের মধ্য দিয়ে এমন প্রয়াস সুপরিস্ফুট।


আরো লক্ষ্যণীয়, প্রথমদিকে নিম্নবর্গের মানুষের দ্বারা পূজিত হলেও সত্যপীরের পূজা ক্রমশ সওদাগর তথা বণিক সম্প্রদায়ের নিকট জনপ্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত পাই প্রচুর সংখ্যক সওদাগর নিয়ে পালা ও পুঁথি রচনা হতে দেখে। সবচেয়ে জনপ্রিয় মদনসুন্দরের পালা, সদানন্দ বণিকের পালা, শুন্দি সওদাগরের পালা এসবই বণিক সম্প্রদায়কে নিয়ে।  

দরিদ্রো সদানন্দ ঠাকুর ছিলো যে।
করিয়া সত্যসির্ণী বড়ই বেড়েছে সে।।
দোতালা তেতালা কোঠা দিব্য দালান।
ঘড়ীবেক ঘড়্যালা দিবাদণ্ড বাজান।।


(চলবে....)



গ্রন্থপঞ্জি:

১. বঙ্গে স্বূফী প্রভাব, ড. এনামুল হক
২. বঙ্গে সুফি প্রভাব ও সুফিতত্ত্বের ক্রমবিকাশ, প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য 
৩. বাংলার পীর সাহিত্য ও সংস্কৃতি, ওয়াকিল আহমদ
৪. ক্বলব সংশোধন, মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আলী 
৫. ইমাম বাতায়ন, বাংলাদেশ 
৬. Mystical Dimensions of Islam, Annemarir Schimmel
৭. মসনভী শরিফ, হযরত মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি (রঃ) 
৮. বাংলার সুফি সাহিত্য, আহমদ শরীফ
৯. বাংলার লৌকিক দেবতা, গোপেন্দ্রকৃষ্ণ বসু
১০. সত্যনারায়নের পাঁচালী, শঙ্করাচার্য ও রামেশ্বর ভট্টাচার্য প্রণীত
১১. সত্যপীরের পুঁথি, কৃষ্ণহরি দাস
১২. মনোহর ফাসরার পালা
১৩. সত্যনারায়নের পাঁচালী, দুর্গাপ্রসাদ ঘটক
১৪. সত্যপীরের অন্যান্য পুঁথি ও পাঁচালী 
১৫. সত্যপিরের পুঁথি, তপন বাগচী
১৬. সত্যপীরনামা, রমাপ্রসাদ নাগ
১৭. The Tawasin of Mansur Al-Hallaj, Translated by Aisha Abd Ar-Rahman At-Tarjumana

|| ছবিতে সত্যপীরের ভিটা, পাহাড়পুর, নওগাঁ, বাংলাদেশ ||

Comments

Popular posts from this blog

খোদার পাথর ভিটা, পুণ্ড্রনগর (মহাস্থানগড়)

গোবিন্দ ভিটা, মহাস্থানগড়

ছবির ইতিহাস, ইতিহাসের ছবি (৪র্থ পর্ব)